আমার মহারানী পর্ব:-০১

সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?

📖 পুরো গল্প পড়ুন

পর্ব:- ০১
Author:- Hassab bin Ahmed

সাল ২০২০, গ্রামের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম রহিম তালুকদার। রহিম তালুকদারের দুইজন স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী মমতাজ বেগম – তার একটি মেয়ে নাম রেহনুমা। আর দ্বিতীয় স্ত্রী রুবিনা বেগম – তার দুইটি মেয়ে মরমী ও নিশি।

বোনদের মাঝে রেহনুমা সবচেয়ে বড়, আর নিশি সবচেয়ে ছোট। আজ থেকে দশ বছর আগে রহিম তালুকদার ও তার প্রথম স্ত্রী (রেহনুমার মা) একটি গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যান। এখন এই বড় বাসায় রহিম তালুকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী তার তিন মেয়েকে নিয়ে থাকে।

রহিম তালুকদারের অঢেল সয়সম্পত্তি থাকায় মরমী ও নিশির মায়ের কোনো অসুবিধা হয়নি। কিন্তু রেহনুমা সবসময় তার সৎমায়ের কাছে নিজের মাকে খুঁজতে চেষ্টা করত। অথচ রুবিনা বেগম কখনো রেহনুমাকে নিজের মেয়ে ভাবতে পারেননি। সবসময় সবার কাছে রেহনুমাকে কাজের মেয়ে হিসেবেই পরিচয় করিয়েছেন।

বোনদের মধ্যে রেহনুমা একটু সুন্দর দেখতে, আর এই সৌন্দর্য রুবিনা বেগমের সহ্য হয় না। তাই তিনি রেহনুমাকে কোনো ধরনের ক্রিম ব্যবহার করতে দেন না। ভাত রান্না করা থেকে শুরু করে পা টিপে দেওয়া পর্যন্ত সব কাজ রেহনুমাকেই করতে হয়।

রেহনুমা মাঝে মাঝে ভাবে – ২০২০ সালে এসব গল্প মনে হয় অবিশ্বাস্য! কিন্তু এটাই সত্য। তবে তিন বোনের মাঝে অনেক ভালোবাসা আছে।

মরমী আর নিশি বাসায় থাকে না। লেখাপড়ার জন্য হোস্টেলে থাকতে হয়। রেহনুমারও ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে অনেক বড় কিছু হওয়ার। কিন্তু সবার আশা পূর্ণ হয় না।

এই তো অনেক কথা বললাম,
কিন্তু নিজের পরিচয় দেওয়া হয়নি।

আমার নাম সাজিদ আহমেদ। আমি নিজের একটা ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি।

প্রতিদিনের মতো মাগরিবের নামাজ আদায় করে একটু শুয়ে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ আম্মুর ডাক। গেলাম আম্মুর রুমে।

আম্মু: বাবা সাজিদ, তোর সঙ্গে একটু কথা ছিল।
আমি: বলো শুনছি।

একটি মেয়ের ছবি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন –

আম্মু: এই মেয়েটার নাম রেহনুমা। তোর বাবা আর রেহনুমার বাবা খুব ভালো বন্ধু ছিল। তোর আব্বুর ইচ্ছে ছিল রেহনুমাকে তাঁর ছেলের বউ করতে। রেহনুমার বাবা-মা মারা যান আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে, মানে তোর আব্বুর মৃত্যুর ২ বছর পর। রেহনুমা তার সৎ মায়ের সঙ্গে বড় হয়েছে।
আমি: আমার কোনো আপত্তি নেই।
আম্মু: আমি জানি। আমি এই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে রেহনুমাদের বাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু রেহনুমার মা বললেন, রেহনুমাকে আমাদের পরিবারে বিয়ে দেবেন না। তবে তাঁর নিজের দুই মেয়ের একজনকে চাইলে দিতে পারেন, কিন্তু রেহনুমাকে দেবেন না।
আমি: কেন?
আম্মু: গ্রামের লোকদের থেকে জানতে পারলাম – রেহনুমাকে বড়লোকের সঙ্গে বিয়ে দেবেন না। কোনো রিকশাওয়ালা বা ঠেলাওয়ালার সঙ্গে বিয়ে দেবেন।
আমি: কীসব উল্টাপাল্টা বলছো!
আম্মু: হুম, এটাই সত্যি। কারণ তিনি চান না তাঁর সৎ মেয়ে সুখে থাকুক।
আমি: তাহলে আর কী করার!
আম্মু: কী করার মানে? আমি চাই রেহনুমা তোর বউ হয়ে ঘরে আসুক। আর তোর আব্বুরও এইটাই ইচ্ছে ছিল।
আমি: হুম, ঠিক আছে বুঝতে পেরেছি। তাহলে আমি কাল রেহনুমাদের গ্রামে যাচ্ছি।
আম্মু: ঠিক আছে, তাই কর।

সকালে চলে এলাম রেহনুমাদের গ্রামে। এখানে আমার এক বন্ধুর বাসা আছে, ওর নাম নাছির উদ্দিন। আমি ওদের বাসায় এসে উঠলাম। ফোনে আগেই বলে রেখেছিলাম। নাছিরের বাবা-মা আমাকে খুব ভালোবাসেন। আমি আর নাছির এক কফি হাউসে গেলাম।

আমি: হুম, এখন কী করবো বল।
নাছির: আমি একটা প্ল্যান করেছি।
আমি: বল, বল।
নাছির: তুই রিকশা চালাবি।
আমি: কী! আমি কেন রিকশা চালাবো? তুই পাগল নাকি!
নাছির: আগে শুনে তো নে। রেহনুমার মা রোজ রিকশা নিয়ে কোথাও না কোথাও যাবেনই। তুই রিকশায় করে তাঁকে নিয়ে যাবি। আর আমি গিয়ে বলবো – বড় মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে ছোট মেয়েকে দিলে সমাজে বদনাম হবে। তাই এক ঠেলাওয়ালা বা রিকশাওয়ালার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিন।
আমি: হুম, আইডিয়া সুন্দর, কিন্তু আমি কি রিকশা চালাতে পারবো?
নাছির: হুম, কঠিন হবে, তবে কিছুদিন চালিয়ে শিখে নে। আর হ্যাঁ, আজ তোকে আমার ভাবিকে আনতে যেতে হবে।
আমি: আচ্ছা, ঠিক আছে। ভাবির কী খবর?
নাছির: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। তুই আমার বিয়েতে উপস্থিত ছিলি, অথচ ভাবিকে এখনো দেখলি না!
আমি: হাহাহা! আরে, তুই কি সেই হাদিসটা ভুলে গেছিস?

উকবাহ্ ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হুঁশিয়ার! (বেগানা) নারীদের কাছে তোমরা প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকো।
তখন আনসারীদের এক লোক বলল – দেবর সম্পর্কে আপনার কী মতামত?
তিনি বললেন – দেবর তো মৃত্যু তুল্য।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৬৭)

নাছির: তুই সত্যিই আলাদা। যাই হোক, বাসায় চল।

তিন দিন রিকশা চালানো শিখে নিলাম। তারপর প্ল্যান মতো কাজ শুরু হয়ে গেল।

রেহনুমার মায়ের সঙ্গে রোজ টুকটাক কথা হতো।

এক সপ্তাহ পর –

রুবিনা বেগম: আচ্ছা সাজিদ, তোমার বাসায় কে কে আছে?
আমি: মেডাম, গরিবের বাসায় আর কে থাকবে? এক মা আর আমি।
রুবিনা বেগম: তা তুমি বিয়ে করেছো?
আমি: আরে, কী যে বলেন মেডাম! এই গরিবের ঘরে কে মেয়ে বিয়ে দেবে?
রুবিনা বেগম: আমার বড় মেয়েকে বিয়ে করবে?
আমি হঠাৎ রিকশায় ব্রেক কষে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম –
আমি: কী বলেন মেডাম?
রুবিনা বেগম: হুম, কিন্তু একটা শর্ত আছে। বিয়ে করে এই গ্রাম থেকে চলে যেতে হবে।
আমি: আমি রাজি, কিন্তু আপনার মেয়ের সঙ্গে অল্প কথা বলতে চাই।
রুবিনা বেগম: ঠিক আছে, তাহলে কাল সকালে আমাদের বাসায় চলে এসো।

এখন আমার খুশির সীমা নেই। শুয়ে শুয়ে শুধু রেহনুমার কথাই ভাবছি। এর মধ্যে নাছির রুমে ঢুকলো।

নাছির: তো সাজিদ, দেখলি আমার প্ল্যান!
আমি: তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
নাছির: আজকে যে পরিমাণ ব্রেনওয়াশ করেছি রুবিনা বেগমের, কী বলবো!

পরদিন –

রুবিনা বেগম: রেহনুমা!
রেহনুমা: জি মা।
রুবিনা বেগম: শুন, তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ছেলে আজ তোমাকে দেখতে আসবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজকেই বিয়ে হবে। এমন কোনো কথা বলবে না, যাতে ছেলের পছন্দ না হয়।
রেহনুমা: জি মা। 😞
রুবিনা বেগম: শুন, ছেলে রিকশা চালায়। আর বিয়ের রাতেই তোমাদের এই বাসা থেকে চলে যেতে হবে। অনেক দূরে, কারণ আমি চাই না সমাজের মানুষ আমাকে খারাপ চোখে দেখুক।
রেহনুমা: আচ্ছা ঠিক আছে মা। একটি কথা বলি? (কান্নাজড়িত কণ্ঠে) 😥
রুবিনা বেগম: হ্যাঁ বলো।
রেহনুমা: বলছিলাম, আমার বিয়েতে যদি মরমী আর নিশি থাকতো তাহলে খুব খুশি হতাম।
রুবিনা বেগম: কোনো দরকার নেই, ফোনে কথা বলো।

আমাকে আর রেহনুমাকে এক ঘরে বসানো হলো।

রেহনুমাকে ফটো থেকে বাস্তবে অনেক বেশি সুন্দর লাগছিল। তাকে দেখে নিজের ভেতরে অদ্ভুত টান অনুভব করছিলাম। মনে হচ্ছিল, রেহনুমা শুধু আমার। কেউ কিছু বলছে না। রেহনুমা নিচে তাকিয়ে আছে। মনে হলো আমাকেও দেখেনি। হয়তো কিছু বলবে না। তাই আমি বললাম –

আমি: আপনি কি এই বিয়েতে রাজি?
রেহনুমা নিচের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিল – জি।
আমি: আপনি কি জানেন আমি রিকশা চালাই?
রেহনুমা: জি, জানি।
আমি: আপনি কি কিছু জানতে চান?
রেহনুমা: না।
আমি: ও, তাহলে আমি আজ আসি?
রেহনুমা: জি।

আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। সামনে রেহনুমার আম্মু।

রুবিনা বেগম: এখন বলো, কোনো আপত্তি আছে বিয়ে করতে?
আমি: না মেডাম, আমি রাজি।
রুবিনা বেগম: আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে আজকেই বিয়ে হবে।
আমি: আজকেই?
রুবিনা বেগম: কেন? কোনো অসুবিধা?
আমি: না, ঠিক আছে।
রুবিনা বেগম: ঠিক আছে। তাহলে আজ রাতে কাউকে অভিভাবক হিসেবে নিয়ে আসবে। তবে এই বাসার সঙ্গে তোমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
আমি: জি, ঠিক আছে।

হাতে সময় নেই। প্রথমে আম্মুকে ফোন করে সব বললাম। আম্মু তো মহাখুশি! তারপর নাছিরকে সব জানালাম।

আমি: শুন, কিছু কেনাকাটা করতে হবে। চল।
নাছির: হুম, চল। হাতে সময় নেই।
আমি: আরেকটা কথা। আজ রাতে বাসায় ফিরতে ইচ্ছে নেই। ভাবছিলাম বিয়ের রাতটা যদি তোর বাসায়…
নাছির: ধুর, চিন্তা করিস না। তোর ভাবি আছে না, সব ম্যানেজ করে দেবে ইনশাআল্লাহ।

সারাদিন ব্যস্ততায় এক মুহূর্ত বসারও সময় পেলাম না।

যাই হোক, বিয়ে করতে যাচ্ছি। কখনো কল্পনাও করিনি এইভাবে বিয়ে করবো।

কোনো লোকজন নেই, শুধু আমরা। বিয়ে হয়ে গেল। এখন রেহনুমাকে নিয়ে ফেরার সময়।

আমার বিয়ের মোহরানা ধার্য করেছি ১০ লাখ টাকা। আমি যখন দশ লাখ বললাম, সবাই অবাক হয়ে গেল – যে একজন রিকশাওয়ালা ১০ লাখ টাকা মোহরানা দেবে কীভাবে! পরে নাছির রুবিনা বেগমকে বোঝালো – এটাই ভালো হয়েছে। এত টাকা দিতে পারবে না, আর কোনোদিন ডিভোর্সও দিতে পারবে না। তখন তিনি শান্ত হলেন।

৫০০ টাকা নগদ দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হলো।

চলবে…

সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?

📖 পুরো গল্প পড়ুন